Travel to Nepal (3rd Part) : Pokhara to Chitwan
Travel to Nepal: Pokhara to Chitwan
প্রথম পর্বে ও দ্বিতীয় পর্বে কাঠমান্ডু ও পোখরার গল্প বলেছি। এবার বলবো পোখরা থেকে চিত্বন যাওয়ার ও বেড়ানোর কাহিনী।
আসলে পোখরা তে অনেক কিছু দেখার আছে। আমাদের হোটেল দুই রাতের জন্যে ছিল। সকালে হোটেল ছাড়তে হবে। সকাল সকাল উঠে তাই ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি হয়ে নিতে হল। পোখরার বাকি থাকা দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে দেখতে যাব, তাই খাওয়া সেরে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়লাম।প্রথমে আমরা গেলাম ফেওয়া লেক (Phewa Lake) দেখতে। পোখরার অন্যতম দর্শনীয় স্থান, নেপালের বৃহত্তম লেক এটি। লেকের মাঝে বরাহী মন্দির (Barahi Temple),ওখানে পূজো হয়। লেকে বোটিং এর ব্যবস্থা আছে। অনেক রকম বোট আছে, কোনোটা শুধু মন্দির পর্যন্ত নিয়ে যায়, কোনোটা আরও সময় নিয়ে লেকে কিছুটা অংশ ঘোরায়। আমাদের হাতে সময় কম থাকায় আমরা শুধু মন্দির পর্যন্ত গেলাম। মন্দির চত্বরটা গোলাকারে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে। চারিদিকে ঘাট বাঁধানো। লেক থেকে প্যারাগ্লাইডিং (Paragliding) ও দেখা যায়।
ফেওয়া লেক |
বরাহী মন্দির |
লেকের মাঝে বরাহী মন্দির |
লেক থেকে ফিরে আমরা গেলাম দেভি’স ফল্স (Davis Falls) দেখতে। ঝর্ণাটি রেলিং দিয়ে ঘেরা। ঝর্নাটিতে জল ছিলনা বেশি সেই সময়, ক্ষীণ জলধারা। অন্যসময় অনেক জল থাকে, খাতের গভীরতা দেখেই বেশ বোঝা যায়। ওইখানেই বসার জন্য সুন্দর করে সাজানো জায়গা ছিল, সুন্দর বাগান ফুলে ভর্তি। ওখানে বসে আমরা কিছুটা সময় কাটালাম।
ডেভিস ফলস |
এরপর আমরা গেলাম গুপ্তেশ্বর মহাদেব গুহা (gupteshwar mahadev cave) দেখতে। গুহার প্রবেশের আগে উপরে টিকিট কাটার ব্যবস্থা।ওই জায়গাটা খুব সুন্দর করে সাজানো। টিকিট ঘর থেকে গুহার মুখ পর্যন্ত সিঁড়ি বানানো,সিঁড়ির একদিকের দেওয়ালে সুন্দর সুন্দর মূর্তি বানানো।
গুপ্তেশ্বর মহাদেব যাওয়ার পথ |
কারুকার্যপূর্ণ সিঁড়ি |
গুহাটি অনেক গভীর। সাথে মায়েরা ছিল,তাই যাওয়া হবে কিনা ভাবছিলাম। কিন্তু দাদা বলে দিয়েছিল অবশ্যই যাবি শেষ পর্যন্ত, খুব ভাল লাগবে।সাহস করে ঢুকেই পড়লাম গুহাতে। ভিতরে আলোর ব্যবস্থা ছিল, আর সিঁড়িও বানানো ছিল।কিন্তু সিঁড়িটা এতটাই খাড়া আর জল কাদায় পিচ্ছিল, একবার পিছলে গেলে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়তে হবে নিচে। সিঁড়ির ধারে রেলিং বানানো ছিল। সেটা ধরেই সাবধানে নামলাম। সিঁড়ি যেখানে শেষ সেখানেই মন্দির গুপ্তেশ্বর মহাদেবের। মন্দিরে ছবি তোলা নিষেধ।
মহাদেবের দর্শন করেই বেশিরভাগ লোক ই ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা ঠিক করলাম গুহার শেষ পর্যন্ত যাব। তাই আরও এগিয়ে গেলাম। ভিতরে আলোর ব্যবস্থা আছে। গুহার কৃত্রিমতা নষ্ট না করে সুড়ঙ্গ পথ ও একদিকের দেওয়াল কিছুটা বাঁধানো। পথ কোনো জায়গায় প্রশস্ত, কোথাও সংকীর্ণ। সাবধানে ধীরে ধীরে আমরা এগোলাম। গুহার অনেকটা ভিতরে চলে এসেছিলাম,বেরোবার পথ অনেকটা দূরে,মনে বেশ অস্বস্তি ও ভয় লাগছিলো । তাও শেষ পর্যন্ত গেলাম। আর শেষটা ছিল ভয়ঙ্কর সুন্দর ,আমাদের আসা সার্থক মনে হল। অবাক হয়ে দেখছিলাম, একটু দূরে গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে আলো নামছে উপর থেকে, আলোর সাথে জলধারা। আসলে আমদের আগে দেখা দেভি’স ফল্স ঝর্নাটি বাইরে থেকে ওই পথে গুহার মধ্যে দিয়ে নামছে। মনে হচ্ছিল যেন রুপো গলে পড়ছে! কি অপরূপ দৃশ্য!! সারা জীবন মনে থাকবে। শেষ ভাল যার সব ভাল তার, ভাবতে ভাবতে গুহার বাইরে চলে এলাম।
গুহার আলোআঁধারী পথ |
গুহার মধ্যে ঝর্ণা |
বেরলাম যখন খাবার সময় হয়ে গেছিল, কাছেই একটা হোটেল দেখে আমরা খাওয়া সেরে নিলাম।ওখানে রাস্তার দুধারে অনেক দোকান,নেপালের জিনিসপত্রের, উপহার দেয়ার জন্য।
পোখরাতে আমাদের শেষ দেখার ছিল আর একটি লেক। ফেওয়া লেকের পরেই,নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক, বেগনাস লেক (begnas lake)।পৌঁছালাম তখন ঘড়িতে প্রায় দুপুর ৩টে।দুপুর বলে বা পোখরা শহর থেকে একটু বেশি দূরে বলে, ওখানে বেশি ভিড় নেই লোকজনের। এটি পোখরার বাকি দ্রষ্টব্য স্থানগুলোর মত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি হয়তো এখনো। কিন্তু ফাঁকা বলে বেশী ভাল লাগছিল শান্ত জায়গাটা। এখানেও বোটিং এর ব্যবস্থা আছে,কিন্তু বেশি লোকজন বোটিং করছে না। তাই লেকটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যাচ্ছিল। ওখানেই বসে কিছুটা সময় কাটান হল।
বেগনাস লেক |
নৌকার সমাহার |
এরপর আমরা গাড়িতে উঠে পড়লাম। ওই দিনই আমাদের চিত্বন এ পৌঁছাতে হবে। বেশি দেরি হলে হোটেল বন্ধ হয়ে যেতে পারে, রাতের খাওয়াও সারতে হবে আমাদের। গাড়ি আর কোথাও থামেনি।আমদের সাথেই কিছু খাবার ছিল, গাড়িতে যেতে যেতেই আমরা টিফিন সারলাম। চিত্বন (Chitwan) এ পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধে হয়ে গেলো। ওখানেই পরের দিনের জঙ্গল অভিযান এর জন্যে কথাবার্তা সেরে রাখা হল আগেই একজন টুরিস্ট গাইড এর সাথে। ওখানেই একটা দোকান থেকে খাবার খেয়ে আমাদের রিসর্ট এ পৌঁছালাম। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুম আসতে দেরি হলো না।
পরের পর্বে আপনাদের চিত্বন বেড়ানো আর ওখান থেকে কলকাতা ফেরার গল্প শোনাব।
পরের পর্বে আপনাদের চিত্বন বেড়ানো আর ওখান থেকে কলকাতা ফেরার গল্প শোনাব।
Comments
Post a Comment