Travel to Nepal (2nd part) : Kathmandu to Pokhara

Travel to Nepal: Kathmandu to Pokhara

প্রথম পর্বে কলকাতা থেকে কাঠমান্ডু (Kathmandu) যাওয়া ও বেড়ানোর গল্প বলেছি । এবার বলবো কাঠমান্ডু থেকে পোখরা যাওয়া ও বেড়ানোর গল্প।

কাঠমান্ডু থেকে পোখরা:-  সকাল ১০টা  নাগাদ গাড়ি এসে গেলো। হোটেল এর বিল মিটিয়ে দিয়ে দিদি জামাই বাবু কে বিদায় জানিয়ে আমরা গাড়িতে উঠে পড়লাম। কাঠমান্ডু থেকে পোখরা প্রায় ৮-৯ ঘন্টার পথ। পথের দৃশ্য অপূর্ব।  এই পথেই পড়ে মনকামনা (Manakamana) দেবীর মন্দির। নাম শুনেই দেবীর মাহাত্য বোঝাই যায়।  মন্দির এ পৌঁছাতে হয় কেবল কারে(রোপওয়ে) পাহাড়ের উপর দিয়ে, আনুমানিক দূরত্ব ২.৮ কিমি, সময় লাগে ১০ মিনিটের মত। কেবল কার থেকে নীচের দৃশ্য খুবই সুন্দর। রূপোলী নদী বয়ে গেছে, সবুজ ক্ষেত ধাপে ধাপে নেমে গেছে, দূরে শহর। কিছু ছবি দিলাম রোপওয়ে যাত্রাপথের।

ravel
Mountain views from manakamana ropeway
রোপওয়ে থেকে নিচের উপত্যকা 
Mountains view from ropeway of manakamana
রোপওয়ে থেকে নিচের উপত্যকা 
Manakamana ropeway
মনোকামনা রোপওয়ে 

Ropeway Tower Manakamana Nepal
রোপওয়ে টাওয়ার 
উপরে পোঁছে কিছু ধাপ উঠে মন্দির চত্বর, দর্শনার্থীদের ভিড়। নেপালের  ভূমিকম্পে এই  মন্দিরের বেশ ক্ষতি হয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গন এর আশেপাশে বিভিন্ন ধরণের দোকানপাট বেশ সুন্দর  করে সাজানো। একজায়গায় দেখলাম কমলালেবুর গাছ যাতে প্রচুর কমলালেবু ফলে আছে। কিছু ছবি নিচে দিলাম।

Orange Tree at manakamana
কমলালেবুর গাছ 
অগ্নীহুতি মনকামনাতে 


কাঠের তৈরী সামগ্রী 
খোল 

পূজো দিয়ে নীচে নামলাম যখন দুপুরের খাবার সময় হয়েই গেছিল। সাথে দেওয়া দিদির বানানো খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে রওনা দিলাম পোখরার পথে।
Sunset on the way to Pokhara
পাহাড়ের কোলে সূর্যাস্ত 

পথে যেতে যেতে ধীরে ধীরে সন্ধে ঘনিয়ে এলো। পাহাড়ের আঁকা বাঁকা পথ আর তার মাঝে সূর্যের লুকোচুরি আর ঠান্ডা বাতাস। অপূর্ব এক স্নিগ্ধতায় মন ভরিয়ে দিল।

পোখরার কাছাকাছি পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেখলাম আকাশ অন্ধকার করে আসছে কালো মেঘে। ড্রাইভার ভাই বলল যে খুব জোর বৃষ্টি হলে তবেই আকাশ পরিষ্কার হবে আর তবেই পরদিন সূর্যোদয় দেখতে পাবো, যেটা পোখরার অন্যতম। আর সাথে এটাও বলল সূর্যোদয় দেখতে হলে আমাদের ভোর ৪টের সময় বেরিয়ে পরতে হবে। এই দীর্ঘ পথ আমরা অতিক্রম করলাম ভালোভাবেই।

পোখরা তে পৌঁছালাম প্রায় সন্ধ্যে ৬.৩০ নাগাত। হোটেল খুঁজতে আর ফ্রেশ হতে লেগে গেল ১ঘন্টা। পোখরা শহরটা খুবই সুন্দর, পরিস্কার রাস্তা, দুধারে সাজান দোকান,আলোয় ঝলমল। ঠিক করলাম হোটেলে বসে না থেকে একটু হেঁটে আসি, সন্ধ্যেবেলায় পোখরা লেকটাও দেখার ইচ্ছা ত ছিলই। রাতের খাবার খেয়েই হোটেলে ফিরলাম। পরের দিন ভোরে উঠতে হবে, অ্যালার্ম লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম।

সারাংকোটে (Sarankot):- অ্যালার্মের আওয়াজ এ উঠে তাড়াতাড়ি করে তৈরি হয়ে বেড়িতে পড়লাম ৪.৩০টা নাগাত। সূর্যোদয় দেখার জন্য যেতে হবে সারাংকোট। গাড়িতে চড়াই পথে সারাংকোটে পৌঁছে মন এক অপরিসীম খুশিতে ভোরে গেল প্রকৃতির রূপ দেখে। 
অন্ধকারেও বেশ বোঝা যাচ্ছিল আকাশ পরিস্কার হয়ে গেছে সারা রাতের বৃষ্টিতে, সারা আকাশ জুড়ে তারার ছড়াছড়ি। নিচে ঝলমলে পোখরা শহর, তার পিছনে দাড়িয়ে অন্নপূর্ণা রেঞ্জ। অপূর্ব অনুভূতি!!অপূর্ব দৃশ্য!!


Mountains view before sunrise from sarangkot
সূর্যোদয়ের আগে 
Sunrise from Sarangkot
সূর্যোদয় 

Mount Machhapuchhre, morning kiss from sun, sarangkot nepal
মাউন্ট মচ্ছপুছরে 
Annapurna Range from Sarangkot, Pokhara, Nepal
অন্নপূর্ণা রেঞ্জ 


Phewa Lake view from sarangkot
phewa লেক  সারাংকোট থেকে 
উষা লগ্ন 


পরের কিছুটা সময় ছিল স্বপ্নের, একদিকে অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে সূর্যোদয়, তার সাথে সাথে আকাশের রঙ পরিবর্তন, অবর্ণনীয়। অন্যদিকে,অন্নপূর্ণা রেঞ্জে (Annapurna) সূর্যের প্রথম আলো পড়ে যেন সোনার কাঠি ছুঁয়ে ঘুম ভাঙ্গাচ্ছে। অসাধারণ দৃশ্য। অবাক হয়ে দেখলাম সকাল হওয়া। পাহাড় গুলো কত কাছে মনে হচ্ছিল, দিনের আলোয় খুব সুন্দর লাগছিলো। সারাংকোটে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে আমরা পোখরা ফিরলাম, প্রায় সারা রাস্তায় আমরা অন্নপূর্ণা রেঞ্জ দেখতে দেখতে ফিরলাম, পোখরা শহর থেকেও দেখা যায় রেঞ্জের কিছুটা।

হোটেলে ফিরে স্নান খাওয়া সেরে বেরতে বেরতে ১২টা বেজে গেল। আমরা বেরলাম পোখরার দর্শনীয় স্থানগুলি দেখার জন্য। প্রথমে গেলাম পোখরার প্রসিদ্ধ মন্দির,বিন্ধ্যবাসিনী মন্দির (Bindhyabasini Temple) দর্শনে ।

Shiva Temple at Bindhyabasini Temple , Pokhara, Nepal
শিবমন্দির বিন্ধ্যাবাসিনী  মন্দিরে 

View of Pokhara City from Vindhyavasini Temple
বিন্ধ্যাবাসিনী মন্দির থেকে  পোখরা

Bindhyabasini Temple, Pokhara, Nepal
বিন্ধ্যাবাসিনী মন্দির  

সিঁড়ি দিয়ে উঠে বড় চত্বরে একদিকে দেবী বিন্ধ্যবাসিনীর মন্দির, অন্যদিকে শিবের মন্দির। খোলা মন্দির চত্বর থেকে পোখরা শহর দেখা যায়। আর দূরে অন্নপূর্ণা রেঞ্জ। ওখানে বসেই সময় কাটাতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু আমাদের আরও অন্য জায়গায়ও যেতে হবে,তাই উঠে পড়তে হল।

এরপর দ্রষ্টব্য স্থান দুটো গুহা। সুড়ঙ্গ পথে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি গুহার ভিতর প্রবেশ করে বেশ রোমাঞ্চ লাগে। হালকা অন্ধকার এবড়ো-খেবড়ো পাথুরে পথ( যদিও ইলেকট্রিক আলোর ব্যবস্থা আছে ), গুহার পাথর বেয়ে জল পড়ছে ওপর থেকে।
cave at pokhara, nepal
গুহা পোখরাতে 


দ্বিতীয় গুহাটিতে ঢোকার আগে দ্বিধায় ছিলাম,যাব কিনা। গুহার নাম শুনলেই বুঝবেন যে এতো দ্বিধা কেন। ব্যাট কেভ (Bat Cave), বাদুড় এর গুহা। এই গুহাটি খুব গভীর নয়, কিন্তু বাদুড় থাকার জন্য এখানে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই, রাস্তাও ঠিক নেই, গুহার ভিতর আওয়াজ করা মানা। প্রতি ৪-৫ জনের দলের জন্য একটি করে চার্জার আলো। ভিতরে একটু কষ্ট করেই ঢুকতে হল।

Bat cave at Pokhara
বাদুড়ের গুহা 
ভেতরে বাদুড়ের মল মূত্রের  দুর্গন্ধ। এছাড়া আলো আঁধারিতে একটা গা ছমছমে ব্যাপার। একদিকে ভয় ও লাগছে আবার ভালো ও লাগছে । সাহস করে ধীরে ধীরে দেওয়াল ধরে আস্তে আস্তে গুহার মধ্যে প্রবেশ করলাম। গুহার উপরের দেওয়ালে আলো ফেলতেই দেখি ঝাঁকেঝাঁকে অসংখ্য বাদুড় ঝুলে আছে। ব্যাট কেভ থেকে ধীরে ধীরে উঠে এলাম।


এরপর আমরা গেলাম শ্বেতী নদী (seti river) দেখতে। ওখানে নদী খাত খুব গভীর। তাই ওপর থেকে নদী দেখা গেলেও নদীর জল পাওয়া যায়না। তাই নদীপথ ঘুরিয়ে একটা বড় টানেল এর মধ্যে দিয়ে উপরে আনা হয়। এখানে একটি পার্ক আছে যেটা অনেক ফুলে ভরা ও খুব সুন্দর করে সাজানো। এখানে তোলা  কয়েকটা ছবি দিলাম।

Seti River at Ppkhrah
শ্বেতী  নদীর প্রবাহ 
রঙিন পাতা 

ওখানে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে হোটেল এ ফিরলাম। সন্ধে বেলা আমরা একটু পোখরা লেক এর চারপাশে ঘুরে এলাম রাতের পোখরা ও খুব সুন্দর। লেক এর চারপাশে বিভিন্ন দোকান। নানারকম আলো দিয়ে সাজানো। বিভিন্ন সুরা , রসনা তৃপ্তি র জন্যে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ । এছাড়া ছোট খাটো ক্যাসিনো ও আছে। সেদিনের মতো ঘোরা ওখানেই শেষ হল। পরেরদিন পোখরা ছেড়ে চিতোয়ান যাওয়ার পালা। আজ এখানেই শেষ করি , পোখরার বাকি গল্প পরের পর্বে বলব।







Comments

Popular posts from this blog

Travel To Nepal (1st Part) : Kolkata To Kathmandu

Travel to Ooty