Travel to Nepal (last part): Chitwan
Travel to Nepal: Chitwan
আগের পর্বে আপনাদের পোখরা থেকে চিত্বন এ আসার কথা বলেছি। এখানে বলবো চিত্বন এ বেড়ানোর ও কলকাতা ফেরার কথা।
চিত্বন জাতীয় উদ্যান (Chitwan National Park) নেপালের তরাই অঞ্চল এর খুব বড় জঙ্গল। এই জঙ্গল জীববৈচিত্রের জন্যে বিখ্যাত।
চিত্বন এর জঙ্গলে |
এখানে অনেক ধরণের সাফারির ব্যবস্থা আছে । যেমন এলিফ্যান্ট সাফারি (হাতির পিঠে চেপে জঙ্গল ভ্রমণ ) , জীপ্ সাফারি (ছোট গাড়িতে করে ভ্রমণ ), জঙ্গল ওয়াকিং (গাইডের সাথে হেঁটে জঙ্গল পরিদর্শন), ক্যানয়িং (ছোটো নৌকাতে করে নদী পথে জঙ্গল পরিদর্শন। এছাড়া আছে পক্ষী পর্যবেক্ষন, এলিফ্যান্ট ব্রিডিং সেন্টার, স্থানীয় থারু উপজাতির বর্ণময় অনুষ্ঠান।
আমরা ঠিক করেছিলাম সকালে হাতির পিঠে চেপে জঙ্গল ভ্রমণ করব। এলিফ্যান্ট সাফারি তে সুবিধা হলো বন্য জীবজন্তুদের খুব কাছে যাওয়া যায়। সেইমতো সকাল ৫ টায় উঠে তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। টিকিট আগে থেকেই কাটা ছিল। হাতির পিঠে বসে হেলতে দুলতে জঙ্গল এর মধ্যে দিয়ে যাওয়া শুরু হল হল। ক্রমশ জঙ্গল ঘন হতে লাগলো। জঙ্গল এর মধ্যে এক অদ্ভুত নীরবতা। হাতির পায়ের চলার শব্দ, বিভিন্ন নাম না জানা পাখির আওয়াজ এ কিছুক্ষনের জন্যে হারিয়ে গেলাম। হুশ ফিরলো মাহুত এর কথায়। আমরা দেখলাম বিভিন্ন ধরণের বানর, ছোপওয়ালা হরিণ (spotted dear) , নাম না জানা অনেক পাখি, ময়ূর, জঙ্গল এর জলের ধারে কুমির, ঘড়িয়াল (এক ধরণের সরু মুখ কুমির), জলহস্তী, বাঘ এর পায়ের ছাপ, আর নেপালের বিখ্যাত এক শিঙ গন্ডার। হাতির পিঠে চেপে আর তার চলার দুলুনিতে ভালো ছবি তোলা যায়নি। কয়েকটা ছবি নিচে দিলাম।
এলিফ্যান্ট সাফারি থেকে এসে আমরা গেলাম হাতি দের স্নান দেখতে। এখানে হাতিদের স্নান দেখার পাশাপাশি কেউ চাইলে হাতির পিঠে বসে স্নান ও করতে পারে মাহুত দের অল্প কিছু সাহায্য করে । এই স্নান দেখা খুব মজার। এখানেই আমরা বেশ কিছুটা সময় কাটালাম।
জঙ্গল এর মধ্যে হাতির পিঠে চেপে |
বানর |
ময়ূর |
এক শিঙ গন্ডার |
ছোপযুক্ত হরিণ(১) |
ছোপযুক্ত হরিণ(২) |
ঘড়িয়াল |
ক্যানোয়িং |
এলিফ্যান্ট সাফারি থেকে এসে আমরা গেলাম হাতি দের স্নান দেখতে। এখানে হাতিদের স্নান দেখার পাশাপাশি কেউ চাইলে হাতির পিঠে বসে স্নান ও করতে পারে মাহুত দের অল্প কিছু সাহায্য করে । এই স্নান দেখা খুব মজার। এখানেই আমরা বেশ কিছুটা সময় কাটালাম।
হাতিদের সাথে স্নান(১) |
হাতিদের সাথে স্নান (২) |
ভিজিয়ে দিসনা প্লিজ :-) |
চুপি চুপি বলি শোন্ |
এরপর আমরা হোটেল এ ফিরে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। এবার আমরা যাবো জীপ্ সাফারি তে । জঙ্গল এর পারমিট আগেই নেওয়া ছিল। আমরা একটা স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্সীর কাছ থেকে প্যাকেজ নিয়েছিলাম। তাই কোনো চিন্তা করতে হয়নি। ওরাই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
একটা হুড খোলা জীপ্ এ ৮ - ৯ জন নিয়ে আমরা জঙ্গল এর মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম। এখানে জীপ্ চলতে চলতে টায়ার এর চাপে একটা রাস্তা তৈরি হয়ে গেছে। রাস্তা কোথাও বা সোজা আবার কোথাও বা আঁকাবাঁকা। দুপুরের খাওয়ার পর জঙ্গল এর ঠান্ডা বাতাস, গাড়ির দুলুনি আর নিস্তব্ধতায় কেমন চোখ লেগে যাচ্ছিলো। কোথাও ঘন জঙ্গল আর কোথাও বা একটু পাতলা। জানিনা আদৌ কিছু দেখতে পাবো কিনা। তবে এই অদ্ভুত নিস্তব্ধতা, মাঝে মাঝে পাখির ডাক, জীপ্ চলার শব্দ আর গাছ গাছালির মধ্যে দিয়ে ঠিকরে পড়া আলোতে জঙ্গলটাকে কেমন মায়াবী জগৎ মনে হচ্ছিল। এটা একটা অদ্ভুত অনুভূতি।
জঙ্গল এর পথে (ছবি ১) |
জঙ্গলের পথে(ছবি ২) |
জঙ্গলের পথে (ছবি ৩) |
জঙ্গলের পথে (ছবি ৪ ) |
জঙ্গলের পথে ঘুরতে ঘুরতে আমরা দেখতে পেলাম বিভিন্ন রকমের পাখি, ময়ূর, বহুরূপী , এক শিঙ গন্ডার, হরিণ , কুমির , নীলগাই , লংগুর । জঙ্গল এ ছবি তোলা খুব খুব কষ্টসাধ্য। জঙ্গল এর মধ্যে ছবি তুলতে হলে দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা, ধৈর্য শক্তি, ভালো ক্যামেরা ও লেন্স আর তার সাথে ভালো ছবি তোলার ক্ষমতাও লাগে। এছাড়া ভাগ্য ও সহায় হতে হয়। নিচে কয়েকটা ছবি দিলাম।
বহুরূপী |
গাছের কোটরে |
নাম না জানা পাখি |
কুমির |
এক শিঙ গণ্ডার |
এক শিঙ গন্ডার ঝোপের মধ্যে |
লম্বা শিঙ যুক্ত হরিণ (ছোপ যুক্ত ) |
নীলগাই |
হনুমান |
ময়ূর |
জঙ্গলের মধ্যে একটি কুমির সংরক্ষন প্রকল্প রয়েছে। যেখানে কুমির এর ডিম্ থেকে বিভিন্ন বয়সের কুমির ও ঘড়িয়াল সংরক্ষিত করা রয়েছে। একে ফেব্রুয়ারি মাস আর তাছাড়া জঙ্গলের মধ্যে ঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে আসে। তাই আমাদের ও ফিরতে হল। রিসর্ট এ ফিরে ফ্রেশ হয়ে রাতের এর খাবার খুব তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম। এখানে সন্ধে বলা থারু উপজাতিদের একটা অনুষ্ঠান হয়। সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সারাদিনের ধকল এ খুব ক্লান্ত লাগছিল। তাই সেখানে না গিয়ে রিসর্ট এ বসেই ঝিঁঝিঁর ডাক আর শিয়ালের আওয়াজ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরেরদিন আমাদের ফেরার পালা। সকাল সকাল উঠে স্নান করে প্রাতরাশ করে বেরিয়ে পড়লাম। ড্রাইভার ও ঠিক টাইম এ এসে গিয়েছিল। আমরা চেকআউট করে বেরিয়ে পড়লাম। যাওয়ার পথে আমরা এলিফ্যান্ট ব্রিডিং সেন্টার (হস্তি প্রজনন কেন্দ্র ) ঘুরে এলাম। এখানে হাতিদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও বিভিন্ন বয়সের হাতি রাখা আছে । এখানে বন্য হাতিকে পোষ মানানো হয়। ওখানেই একটা জায়গা থেকে দুপুরের খাওয়া সারলাম। ওই দিন এ ছিল হোলি বা দোল। এখানে মানুষ জন বিশেষত মহিলারা সুন্দর রঙিন পোশাক পরে এই উৎসব পালন করেন। সারাদিন বিভিন্ন উপজাতিদের মধ্যে নাচ গান বিভিন্ন শিল্প কলার প্রদর্শন চলে।
ছোট হাতি |
হাতি প্রজনন কেন্দ্রে |
স্থানীয় থারু উপজাতিদের সাথে |
উতসবের জন্যে তৈরী |
চলতে চলতে |
হাসিমুখে |
এবার সরাসরি বীরগঞ্জ। এই ছয় সাত দিনে পাহাড়ের কোলে এই ছোট্ট দেশটার প্রতি কেমন যেন ভালোবাসা তৈরী হয়ে গেছিলো। এর প্রাকৃতিক বৈচিত্র , মানুষজন কেমন যেন আপন করে নিয়েছিল আমাদের। ফিরতে হবে ভেবে মন খুব খারাপ লাগছিলো। কিন্তু ফিরতে তো হবেই। আমাদের ড্রাইভার ও আমাদের বন্ধুর মতো হয়ে গেছিল। বীরগঞ্জ পর্যন্ত আসার কথা ছিল কিন্তু আমাদের ট্রেন ধরার জন্যে রকসৌল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল। আসার পথে কয়েকটা ছবি নিচে দিলাম।
মন কেমন করা ফাঁকা রাস্তা |
কেরামতি |
রকসৌল থেকে ট্রেন ধরে সোজা হাওড়া। বাড়ি ফিরলাম বটে কিন্তু মনে রয়ে গেল নেপালের মধুর স্মৃতি। জানিনা আবার কবে যাওয়া হবে বা আদৌ যাওয়া হবে কিনা।
কিন্তু আপনারা জানাবেন এই ভ্রমণ কাহিনী কেমন লাগলো। ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন।
।।সমাপ্ত ।।
Comments
Post a Comment