Lava-Kolakham-gantok-nathula

গাড়ি কিনেছি প্রায় বছর দুয়েক এর বেশি, নিজেও গাড়ি চালিয়ে দীঘা, পুরী , পুরুলিয়া , কেওঁঝার, রাঁচি , নেতারহাট  এইগুলো ঘুরেছি। এবার ইচ্ছা হলো পাহাড় এ যাবো, তো নেট ঘেটে ঠিক করলাম লাভা, কোলাখাম  আর তার সাথে গ্যাংটক ,নাঃথুলা এইগুলো করবো। কারণ রাস্তা বেশিরভাগ এ ভালো। এর আগে পুরুলিয়া, নেতারহাট এগুলোতে গাড়ি চালিয়ে একটু ধারণা পেয়েছি যে চড়াই  এ কিভাবে চালাতে হয়। কিন্তু এবার হিমালয়ান রেঞ্জ, খাড়াই রাস্তা অনেক বেশি এবং আমার বাড়ি থেকে দূরত্ব ও অনেকটা। যা হবে দেখা যাবে এই মানসিকতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম  যে যাবো সেলফ ড্রাইভ করে। আগে থেকে শিলিগুড়ি , kolakham এ homestay ও গ্যাংটক এ হোটেল বুক করে রাখলাম।

বেড়াতে যাওয়ার আগের দিন সমস্ত ব্যাগ ও দরকারি জিনিস , দরকারি ওষুধপত্র  গুছিয়ে রাখলাম। রাতে আর ঘুম আসেনিএই চিন্তায় যে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার গাড়ি চালাতে হবে। তখন রাত ২টো বাজে, আমরা চোখে মুখে জল দিয়ে দুগ্গা দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়লাম। রাতে ট্রাক এর চাপ থাকে এবং কুয়াশার জন্যে বেশ ধীরে ধীরে গাড়ি চালালাম। আমতলা , বারুইপুর, dumdum , মধ্যমগ্রাম হয়ে প্রপার NH ১২ ধরতে ভোর হয়ে গেলো। এরপর রাস্তা বেশ ভালো, কিন্তু পথে বাদ  সাধলো ফার্স্টটাগ, অজানা কারণে আমার ফার্স্ট ট্যাগ কাজ করছে না , অনেকগুলো toll  ডাবল ট্যাক্স দিয়ে পার হলাম। মাঝে বেশ  সময় নষ্ট হলো, কাস্টমার কেয়ার ও একাধিক  নম্বর এ ফোন করে, নতুন করে ডকুমেন্ট আপলোড করে। ফাস্টট্যাগ ঠিক হলো বেথুয়াডহরীর কাছে একটা toll বুথ থেকে। দুপুর তিনটে নাগাদ লাঞ্চ সারলাম একটা ধাবা থেকে। শিলিগুড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল ৪.৩০ বাজলো।হোটেল এ গাড়ি রেখে ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নিলাম আর কাছের মার্কেট এ কিছু কেনা কাটা করলাম আর  একেবারে ডিনার করে তারতারি শুয়ে পড়লাম।

পরেরদিন সকাল সকাল কফি আর বিস্কুট খেয়ে  বেরিয়ে পড়লাম| একটু এগোনোর পরে পড়লো সেবক রোড। দুপাশে ঘন সবুজ  শাল ,সেগুন এর জঙ্গল এর মাঝে নানা রকম ফুল পাতার গাছ তার সাথে মসৃন রাস্তা। এই রাস্তায় এলে মন ভালো হবেই । সবুজে ঘেরা অপূর্ব  সুন্দর রাস্তা।


তারপর পড়লো coronation ব্রিজ, ব্রিটিশ আমলের  এই ব্রিজ এর উপর দিয়ে তিস্তা কে অতিক্রম করে আমরা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উপরে  উঠতে থাকলাম। তারপর NH ১৭ ধরে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে মিনামোড়, বাগরাকোট  থেকে রুটি সবজি আর আলুর পরোটা  চা সহযোগে ব্রেকফাস্ট করলাম। তার পর কিছুটা গিয়ে ডামডিম থেকে বাদিক নিয়ে গরুবাথান হয়ে চললাম Ambiok View Point এর দিকে।
 










 চারিদিকে সবুজ চাবাগান দিয়ে ঘেরা পাহাড় তার মাঝে আঁকাবাঁকা রাস্তা একটু দূরে কুয়াশা ভরা পাহাড় হাতছানি দিচ্ছে। এখানে একটু সময় কাটালাম গাড়িকে একটু বিশ্রাম দিলাম। তারপর আবার আঁকাবাঁকা পথে ওপরে ওঠা । একটু সতর্ক হয়ে উপরে উঠতে হচ্ছিলো, যদিও চারিদিকের সিনারি বেশ সুন্দর কিন্তু সেদিকে তাকানোর উপায় নেই কারণ একটু ভুলচুক হলেই ভবলীলা সাঙ্গ। এবার আমরা লাভা ঢোকার একটু আগে দাঁড়ালাম যেখান থেকে লাভা শহর তা দেখা যায়। এখানে সাথে নিয়ে আসা কিছু খাবার খেলাম। জায়গাটা সুন্দর পাইন গাছ দিয়ে ঘেরা আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গেছে লাভা শহরের দিকে।








তার পর আমরা পৌছালাম লাভা মনাস্ট্রি । নানা রকম ফুল , অর্কিড  দিয়ে সাজানো লাভা মনাস্ট্রি, তার  সাথে মেঘ কুয়াশায় ঢাকা উপত্যকা , পাহাড় জঙ্গল এর মধ্যে ছোট ছোট বাড়ি দেখা যায় । লাভা হলো মেঘের স্বর্গ , এই মেঘ এই রোদ্দুর, এই বৃষ্টি । সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে  দুটি  উপাসনা গৃহ। এখানে কিছু সময় কাটিয়ে আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। 
lava monastry #traveldiaryofpallab










এরপর আমরা রওনা দিলাম কোলাখ্ম এর দিকে। কোলাখাম হলো একটা ছোট নিস্তব্দ পাহাড়ি গ্রাম, যেটি নেওরা ভ্যালি  ন্যাশনাল পার্ক এর মধ্যে  অবস্থিত । লাভা বাজার এর আগে একটি ছোট চেক পোস্ট আছে  যেখানে ২০০ টাকা  এন্ট্রি ফী জমা করে নিজের গাড়ি নিয়ে চললাম, এবার খেবড়ো পাথুরে রাস্তার উপর দিয়ে। কিছু কিছু জায়গায় এতটা নিস্তব্দ শুধু গাড়ির চলার আওয়াজ ছাড়া আর কিছু নেই । আমরা কিছুটা সময় এই জঙ্গল  এর মধ্যে  গাড়ি বন্ধ করে এই নির্জনতা অনুভব  করার চেষ্টা করলাম। মাঝে হয়তো কোনো এক অজনা পাখি শিস  দিয়ে উঠলো, একটু হওয়া তে গাছের পাতার দোলার একটু শব্দ। গাছের ডালে দেখলাম একটা নীলরঙা ছোট পাখি। এখানে আরো নাম না জানা পাখি, প্রজাপতি  বিভিন্ন ধরণের অৰ্কিড। এই কঠিন রাস্তা ড্রাইভ করার কষ্ট নিমেষে উধাও হয়ে গেলো। 


অবশেষে আমরা পৌছালাম খোলাখাম এ। এখানে আমরা ছিলাম Casero kolakham নাম এ একটা হোমস্টে  তে।  পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে একটু বিশ্রাম নিলাম। বিকাল থেকে শুরু হলো ঝিরঝির বৃষ্টি। বৃষ্টি থামতে আমরা চাদর জড়িয়ে হোমস্টে এর বারান্দায় বসে দূরের পাহাড় এর vally দেখতে দেখতে চা  আর পাকোড়া সহযোগ সন্ধ্যাটা উপভোগ করলাম ।




 

Buy good ac: 
https://amzn.to/44MBomz


Comments

Popular posts from this blog

Bangalore to Mysore road trip by bike

Travel to Ooty